কবি ও কবিতা

কবির জীবন খেয়ে জীবন ধারণ করে
কবিতা এমন এক পিতৃঘাতী শব্দের শরীর,
কবি তবু সযত্নে কবিতাকে লালন করেন,
যেমন যত্নে রাখে তীর
জেনে-শুনে সব জল ভয়াল নদীর।
 
সর্বভূক এ কবিতা কবির প্রভাত খায়
দুপুর সন্ধ্যা খায়, অবশেষে
নিশীথে তাকায় যেন বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরী,
কবিকে মাতাল করে
শুরু হয় চারু তোলপাড়,
যেন এক নির্জন বনের কোনো হরিণের লন্ডভন্ড খেলা
নিজেরই ভিতরে নিয়ে সুবাসের শুদ্ধ কস্তুরী।
 
কবির কষ্ট দিয়ে কবিতা পুষ্ট হয়
উজ্জ্বলতা বাড়ায় বিবেক,
মানুষের নামে বাড়ে কবিতার পরমায়ু
অমরতা উভয়ের অনুগত হয়।

মায়াবতী রমনী

 ব্যবহার করা কপালের টিপটার আঠা নষ্ট হলেও মেয়েরা সেটা যত্ন করে রেখে দেয়। একজোড়া কানের দুলের একটা হারিয়ে গেলেও অন্যটা ফেলে না। পুরাতন শাড়িটা ভাঙা চুড়িটা কাজে লাগবেনা জেনেও তুলে রাখে, কারণ হল মায়া। মেয়েরা মায়ার টানে ফেলনা জিনিষও ফেলে না। অসংখ্য কষ্ট , যন্ত্রণা পেয়েও মেয়েরা মায়ারটানে একটা ভালোবাসা, একটা সম্পর্ক, একটা সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়। এই জন্য মেয়েরা মায়াবতী আর মায়াবতীর কোন পুরুষবাচক শব্দ নেই!


আল্লাহ মহান

 তুমি যদি পূর্ণভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা করো,

যেমনটা করা উচিৎ,

তাহলে তিনি অবশ্যই তোমার সব প্রয়োজন পূরণ করবেন,

যেমনটা তিনি পাখিদের জন্য করেন।

তারা ক্ষুধার্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়,

কিন্তু ভরা পেট নিয়ে নীড়ে ফেরে !


রাত

 রাত মানেই কেউ কফির মগ হাতে বারান্দায় বসে চন্দ্র বিলাসে, কেউবা প্রিয় গানে বিভোর হয়ে খাটের এককোণে। কেউ হয়তো পরিবারের চিন্তায় হতাশ কেউবা কাছের মানুষের কাছেই প্রতারণার শিকার, কেউ আবার খুব করে চাইছে সবটা ঠিক করতে আবার কেউ চাইছে যেকোনো বাহানায় পিছু ছাড়তে।

জীবন কত অদ্ভুত তাই নাহ!




শুধু তোমাকেই

 বিশ্বাস করো, তোমরা, এখন আমার

কারো কে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না।

যখন দেখি তোমাদের মতো মেয়ে কে

অহেতুক নোংরামির শিকার হতে হয়,

অকারণে চোখের জল ফেলতে হয়।

তখন বিশ্বাস করো ওই অমানুষ গুলো  কে

থু থু দিতে ইচ্ছে করে।

আকাশ যদি অষ্টাদশী হতো, 

তুমি যদি আকাশ হতে, আমি কি হতাম দ্রাঘিমা? 

আমার একান্ত অনইচ্ছার পাখিটা কে

তুমি চুরি করেছো,  

তোমার তৃপ্তির শেষে ফিরেছো হাসি মুখে

যেন কলংকের তিলক বয়ে গেল,  

কি হবে এর পরিণাম? 

তোমার মাঝে হয়তো আমার অস্তিত্ব থাকবে না।

দেহ জগৎ, বড় জগৎ, ইচ্ছে তার কান্ডারী 

যতুগৃহে আগুন দিতে ব্যস্ত যে আজ গান্ধারী। 

আমি যদি আজ তারে পথে যাই পেয়ে

চুপিচুপি দেখে নেব কোন বাড়ির মেয়ে।

কালো জলে ফুটে থাকা আমার প্রেমের মালা

না পাওয়ার বেদনা নিয়ে গৃহমুখে  পথ চলা।


পবিত্র মহামারী

 কি অদ্ভুত লাগে ফাঁকা রাস্তায় বাতাসের ধাক্কা!

একটুকরো চাঁদের আলোয় ফুটে ওঠে ধ্বংসস্তূপ,
ট্রাফিক শূন্য আকাশ, লকডাউনে বন্দী পাখির দল।

আজ প্রকৃতির উন্মাদনায় ফাঁকা দুই হাত,

যত পারি কুড়িয়ে নিই সবুজ সন্ধ্যা।
বাড়ুক দুর্ভিক্ষের আস্তাকুঁড়ে আরশোলার মৃত্যু আর্তনাদ।


ফাঁকা বাড়ির ছাদ ভর্তি আচার, বৃষ্টির স্বাদ মেটায়,
শ্মশানভূমির প্রাঙ্গণে জমা ছাই সুর তুলেছে, কান্ডারী চায়।

 সেনার পদতলে হারিয়ে যায় সাবধানতার বাণী,

শেষ ট্রেনের হাতল ফসকে বেড়িয়ে যায় ঠান্ডা হাত।


সাগরের জল ঠেকেছে অসাড় পায়ে,
রাস্তায় বেড়েছে ডুবুরির মুক্তোর খোঁজ,
নরকের শুন্যগর্ভে পায়চারি করে অক্টোপাসের দল।

তুমি কি দেখেছ,

সুবিশাল নিস্তব্ধ রাতের শেষে মর্মস্পর্শী ভোরের আলো?
গোধূলির লক্ষ্মী আগলায় পরিত্যক্ত তুলসী তলা?
আচমকা মুষলধারে বৃষ্টি,
ডুবে যায় ফাঁকা ধোঁয়াময় বারান্দা।


ঝাউবন পেরিয়ে জোনাকির আলোয় মাখা অমৃতের হদিশ…
রঙ্গীন মুখোশে হারিয়েছে জীবনানন্দের রূপসী বাংলা।
ও পবিত্র মহামারী!
তুমি ডুবিয়েছ,উড়িয়েছ তোমার ঝড়ে,
এবার ভিজে কবিতায় হবে কি তোমার প্রস্থান?

দুপুর

 কোনো এক শান্ত বেলার,

নিরব দুপুর।