"আমারে বিয়ে করবি কুসুম?"
সায়নের এমন কথায় হকচকিয়ে গিয়েছিলো কুসুম।
অন্যান্যদিনের মতো সেদিনও কুসুমের কলেজ থেকে ফেরার রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলো সায়ন।কুসুমও অভ্যাসগতভাবে হাটছিলো সায়নের পাশে পাশে।হুট করে সায়ন এমন কিছু বলতে পারে সেটা ভাবে নি কুসুম।
লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিয়েছিলো সে।
সায়ন আবার বলতে শুরু করলো,
-তোরে মুখে কিছু বলতে হবে না।কদম চাচার দোকান থেকে তোর জন্য আলতা,স্নো আর পাওডার নিয়ে আসছি।তোর যদি মত থাকে তো এইগুলা নিবি আর না হলে না নিয়েই চলে যাবি।
-আমি কিছু জানি না সায়ন ভাই।বাবা যদি রাজি থাকে আমিও রাজি।বাবারে আমি কষ্ট দিতে পারবো না।
-ঠিক আছে।আমি কালই আব্বারে চাচার কাছে পাঠাবো।তোরে আমি খুব তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে আসবো।
পরের দিন বিকাল বেলা করিম শেখের তেঁতুল গাছ থেকে তেঁতুল চুরি করে এনে লবণ-মরিচ দিয়ে বেটে খাচ্ছিলো কুসুমরা তিন ভাই বোন।দুষ্টুমি আর কুটবুদ্ধিতে দুই বোন পাকা হলেও অকাজ গুলা ভাই কে দিয়ে করায় তারা।এই যেমন,এর গাছে ওঠা,ওর বাড়ির আমটা,জামটা,লিচুটা চুরি করে আনা।তারপর সেগুলো বাড়ি এনে তিনভাইবোন একসাথে খাওয়া।এর যেন মজায় আলাদা।
কুসুম একটু তেঁতুল মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বাদ নিতে লাগলো। এমনসময় ওর ভাই এসে বললো,
-বাড়িতে হানিফ চাচা আর চাচার ছেলের সায়ন ভাই আইছে।আপার বিয়ের কথা বলতেছে।সায়ন ভাইয়ের সাথে নাকি আপার বিয়ে হবে।কি যে মজা!আপার বিয়ে খাব।
সাথে সাথে কুসুম আর চাপা এক দৌড়ে আঁড়ালে এসে দাড়ালো। সায়ন আর সায়নের বাবা উঠানে চেয়ারে বসে আছে।সায়নের বাবা আর কুসুমের বাবা বসে কথা বলছে।সায়ন চুপচাপ বসে আছে।চুপচাপ বললে অবশ্য ভুল হবে।সায়নের দুইচোখ কুসুমকে খুঁজে চলেছে।
-দেখো সাবের মিয়া,আল্লাহ দিলে আমার কিছু কম নাই আর আমার এই একটাই পোলা।সয়-সম্পত্তি যা আছে সবই ওর।তাছাড়া আমার পোলার মতো পোলা এই গাঁয়ে নেই।বিড়ি সিগারেটের নেশা নেই।আর আমি কি কইতাম।তোমরা ছোটকাল থেকে দেখতেছো ওরে।আর আমাগো কুসুম মা ও ভদ্র-সভ্য।গুরুজনেরে সম্মান দেয়।তারে গাঁয়ের সবাই ভালবাসে।আমার পোলা যখন কইলো ওরে বিয়ে করতে চায় আমি কিন্তু না করিনাই।আশা করি তোমারও আপত্তি নাই।
-দেখেন ভাইসাব,আপত্তি আমার ও হইতো না।সায়ন বাপ ছেলে ভালো।কিন্তু আমার মেয়ে কলেজে পড়ে আর সায়ন বাপ ননম্যাট্টিক। এইখানেই আমার আপত্তি।ও যদি ম্যাট্টিক পাশ ও হইতো আমি ভেবে দেখতাম।আর তাছাড়া আপনার যাই থাক ছেলে তো বেকার।আমি কোন ভরসায় মেয়ে তুলে দেবো তার হাতে?
-তুমি কি আমারে অপমান করতেছো?
-ছি ছি ভাইসাব।এমন কিছুই না।
-তাইলে তুমি একজন ভাগচাষী হয়ে আমার কাছে মেয়ে দিতে অস্বীকার করো কেমনে?
রাগে গজগজ করতে লাগলেন সায়নের বাবা হানিফ শেখ।তিনি উঠে চলেই যাচ্ছিলেন।সায়ন আটকালো নিজের বাবাকে।এবার সে নিজে কথা বললো,
-চাচা আপনার সব কথা আমি মানলাম।কিন্তু আপনি আমারে কথা দেন আমি যদি ম্যাট্রিক পাশ করে একটা কাজ জুটাতে পারি আপনি কুসুমরে আমার কাছে দিবেন।কথা দেন তার আগে কুসুমের বিয়ে দেবেন না।
-ঠিক আছে কথা দিলাম।
সেদিনের পরে সায়ন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নবম শ্রেণীতে।এসএসসি পাশ করে সে।শুধু তাই নয় অনেক চেষ্টা করে লোকজন ধরে কুয়েতের ভিসা করায় সে।সেখানে একটা কাজের ও ব্যাবস্থা করে ফেলে।ততদিনে কুসুম ও এগিয়ে গিয়েছিলো অনেক দূর।এ গ্রেড নিয়ে এইচএসসি পাশ করে এলাকার কলেজেই ইতিহাসে অনার্স ভর্তি হয় সে।
তারপর সারা গ্রামকে সাক্ষী রেখে ধুমধাম করে বিয়ে হয় সায়ন আর কুসুমের।বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় সায়ন কুয়েত চলে যায়।এই ১৫ টা দিন ছিলো কুসুমের জীবনে কাটানো সুন্দরতম দিন।সায়ন এই দিনগুলোতে নিজের সবটুকু ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছে কুসুমকে।
দেখতে দেখতে সায়নের যাওয়ার সময় হয়ে যায়।যাওয়ার আগে ২দিন কুসুম অভিমানে কথা বলেনি সায়নের সাথে।শেষমেশ যাওয়ার আগের দিন রাতে সায়নের বুকে মাথা রেখে খুব কেঁদেছিলো কুসুম।কে জানতো এটাই ছিলো সায়নের বুকে কুসুমের শেষ মাথা রাখা!আগে জানলে হয়তো কুসুম আরও কিছুক্ষণ মাথা রেখে শুয়ে থাকতো সায়নের বুকে।
সায়ন যাওয়ার আগে কুসুমকে একটা ফোন উপহার দিয়ে যায়।আর কথা দিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে সে।
হ্যাঁ সায়ন কথা রেখেছিলো। যাওয়ার মাত্র ১১দিনের মাথায় ফিরে এসেছিলো সে।তবে এসেছিলো লাশ হয়ে।
সায়নের প্রাণহীন দেহটা উঠানে রাখতেই চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো কুসুম।যখন জ্ঞান ফিরলো ততক্ষণে দাফনকাজ শেষ হয়ে গিয়েছিলো।কেননা লাশ দেশে পৌছাতেই তিনদিন লেগে গিয়েছিলো।লাশে পঁচন ধরতে শুরু করেছিলো।
কবরে যাওয়ার আগে তাই শেষদেখা হয়নি কুসুম আর সায়নের।জ্ঞান ফেরামাত্র পাগলের তাণ্ডব শুরু করেছিলো কুসুম।গ্রামকে গ্রাম লোক আসতো কুসুমকে দেখতে।তারপর শ্বশুড়বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো কুসুমকে।তারপর ধীরে ধীরে কুসুম শান্ত স্রোতহীন নদীর মতো হয়ে গেলো।তবে রাগ,দুঃখ,অভিমান তার আজও আছে।সেটা শুধু জানে কবরে শুয়ে থাকা সায়নের প্রাণহীন দেহটা।
মাঝরাতে নিঃস্তব্ধ পুকুরপাড়ে বসে অতীতের স্মৃতিচারণ করছিলো কুসুম।ঝি ঝি করে ঝিঝিপোকা ডাকছে।কুসুমের ইচ্ছে করছে সায়নের মুখটা একবার দেখতে।আজকাল খুব ইচ্ছা করে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে সায়নের কাছে চলে যেতে।হঠাৎ পিঠে কারও ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছু ফিরে তাকায় কুসুম।পেছনে চাপা দাঁড়িয়ে আছে।
-কিরে আপা,অন্ধকারে একা একা কি করিস?তোর ভুতের ভয় করে না?আগে তো খুব ভয় পেতিস ভুতে।
-ভুতে কারা ভয় পায় জানিস বোনু?যাদের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা আছে।আমি তো বাঁচতেই চাইনা।আমার আবার কিসের ভয়!
আর কথা বাড়ালো চাপা।চুপচাপ কুসুমের পাশে গিয়ে বসলো।চাপা যেন নিজের বোনকেই চিনতে পারছে না।রাতের আধারে এই রহস্যময়ী রমণীকে খুব অচেনা লাগছে চাপার।এই কি তার সেই প্রাণোচ্ছল বড় আপা!
কুসুম আবার বলতে শুরু করলো,
-তোর বিয়ের তো বেশি দেরী নেই বোনু।এক সপ্তাহ ও না।একটা কথা বলি মনে রাখিস।নিজের স্বামীকে কখনো চোখের আঁড়াল করিস না।আঁচলে বেধে রাখিস।আঁচলের বাঁধন আলগা হলেই কিন্তু আর খুঁজে পাবি না।
-আচ্ছা আপা, ভালবাসার মানুষকে ছেড়ে বেঁচে থাকা কি খুব কষ্ট?
-খুব কষ্ট রে বোন।অন্তরটা জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়।কাউরে দেখানো যায় না।
বিড়বিড় করতে করতে পুকুরপাড় থেকে উঠে ঘরের দিকে হাঁটা দিলো কুসুম।
পুকুরপাড়ে বসে চাপা ভাবছে,
সে তাহলে কি করে নিজের ভালবাসার মানুষকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে?এই বিয়েটা করা ভুল হবে না তো?এই বিয়েটা করলে সে ও আপার মতো ভালবাসার কষ্টে এভাবে তিলেতিলে শেষ হবে না তো?
উঁহু আর কিছু ভাবতে পারে না চাপা।ধীরে ধীরে পা বাড়ায় ঘরের দিকে।
একে একে সাতটা দিন পার হয়ে গিয়েছে।আজ চাপার বিয়ে।সকাল থেকে তোড়জোড় এর শেষ নেই।শহরের বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে চাপার।ছেলে বিরাট ব্যবসায়ী। সবার খুশি যেন ধরে না।
তবে এতোকিছুর মধ্যে একমাত্র চাপায় অখুশি।কারন সে ঠিক করে ফেলেছে নিজের ভালবাসার মানুষ এর সাথে পালিয়ে যাবে সে।চাপার প্রেমিক অনিক ও অবশ্য পালানোর জন্য তৈরী হয়ে আছে।কথা দিয়েছে গ্রামের সীমানায় পুরোনো খালপাড়ে অপেক্ষা করবে সে চাপার জন্য।
তিলে তিলে গড়ে তোলা ২ বছর এর প্রেম।পাশের গ্রামের রতন মাঝির ছেলে অনিক।শহরের ভার্সিটিতে পড়ে।মেধাবী ছাত্র সে।শুধু বাবা মাঝি বলেই ওকে বিয়ে করা যাবে না।হ্যাঁ এটাই সমাজের নিয়ম।চাপা অবশ্য সেসব নিয়মের ধার ধারে না।তাই পালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে।এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষা।
পুরো বাড়িতে বিয়ের আমেজ লেগেছে।কচিকাঁচারা হাতে মেহেদী সাজাতে ব্যস্ত,কেউ রঙ খেলার ফন্দি আঁটছে, কেউ বা মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করছে কোন জামাটা পড়বে।মুরব্বিরা মেতে উঠেছে নানারকম রঙ্গ তামাশায়।কখনো নিজেদের মধ্যে আর কখনো নাতিনাতকুর এর সাথে।
এসবের মধ্যে মধ্যম বয়সের মানুষগুলোর কাজের চাপে জিরোবার ফুসরত মিলছে না।পুরুষেরা বাজার আর বরযাত্রীর আপ্যায়ন এর ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত।
মহিলাদের একদল পেয়াজ,রসুন,আদা কাটাকাটিতে ব্যস্ত।এতো মানুষ এর রান্না চাট্টিখানি কথা নয়।তাছাড়া হাতে সময় কোথায়!বাদ যোহর বিয়ে।অন্যদল কনে সাজাতে ব্যস্ত।বিয়ে বাড়ির কাজের কি আর শেষ আছে!
এতোকিছুর মধ্যে কুসুমের কোনো কাজ নেই।তাকে কেউ কোনো কাজে ডাকছে না।সে যে অপয়া।শুভ অনুষ্ঠানে তার কি আর কাজ করতে আছে!
দাওয়ার একপাশে কুসুম বসে বসে সব কাণ্ড দেখছে।আজ বোনের বিয়েতে হয়তো তারই সবথেকে বেশি কাজ করার কথা ছিলো।কিন্তু নিয়তি বড় নিষ্ঠুর।
এর মধ্যেই কচিকাঁচাদের হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। বর এসেছে,বর এসেছে।সাথে সাথে ছেলেবুড়ো সব ছুটলো নতুন বর দেখতে।শালীরা সব বরের গেইট ধরতে ব্যস্ত।গেইট ধরে যা টাকা হবে ভাগ করে নেবে সবাই।
এতোকিছুর মধ্যে চাপা দেখলো ঘরে সে ছাড়া কেউ নেই।সবাই বর দেখতে ছুটেছে।এই তো সুযোগ।চট করে কোনো এক আত্মীয়ের কালো বোরকা আর নিকাব পড়ে নিলো চাপা।বিয়ে বাড়িতে বোরখা পড়ে কে যাচ্ছে আর কে আসছে দেখার সময় কোথায় সবার!
তারপর!সারা বাড়ি খুঁজেও কনেকে পাওয়া গেলো না।বিয়ে বাড়িতে হুলস্থুল।কথাটা এক কান,দুকান করে বরযাত্রীদের কানে পৌছালো।
ছেলের বাবা বড় ব্যবসায়ী। বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি কোনো উচ্চবাচ্য করলেন না।সাবের আলীকে আড়ালে ডেকে বললেন,
-দেখেন ভাইসাব,আমি ব্যবসায়ী মানুষ। সমাজে একটা সম্মান আছে।আপনার মেয়ে এভাবে যে নাক কাটবে আমি ভাবতেও পারিনি।আমি অশান্তি চাচ্ছি না।এখন খালিহাতে ফিরে গেলে আমাকে আর আমার ছেলেকে নিয়ে পাঁচজনে পাঁচরকম কথা বলবে। তার চেয়ে অন্য কোনো বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকলে বলেন।বিয়েটা মিটে যাক।
সাবের আলী এমন কোনো মেয়ের সন্ধান পেলেন না যাকে আপাতত কনেরুপে বরপক্ষের সামনে পাঠানো যায়।
-দেখেন ভাইসাহেব তেমন কাউরে তো দেখতেছি না।আমার শালীর এক মেয়ে আছে তা সে নিতান্তই শিশু।৭ম শ্রেণিতে পড়ে।আর আমার দুইটাই মেয়ে। বড় মেয়ে তো জানেনই বিয়ের একমাসের মাথায় বিধবা হয়ে আমার কাছেই আছে।
-তাহলে আপনার বড় মেয়েকেই সাজিয়ে নিয়ে আসুন।
-কি যা তা বলছেন! আপনার ছেলে মানবে নাকি!আর তাছাড়া কে মানবে এই বিয়ে।
-ঠিক আছে আমি আমার ছেলের সাথে পরামর্শ করে দেখছি।যদি রাজি করাতে পারি তাইলে ওই মেয়েকেই সাজিয়ে আনবেন।আপনি না হয় বাড়ির মানুষদের কাছে পরামর্শ নেন।
সাবের আলী নিজের স্ত্রীর কাছে বরের বাবার দেওয়া প্রস্তাব রাখতেই তিনি খুশি হয়ে উঠলেন।এদিকে ছেলেকেউ রাজি করিয়ে নিয়েছে ছেলের বাবা।শুধু বাধ সাজলো একজন।সে হল কুসুম।নিজের ছোটবোনের হবু স্বামীকে বিয়ে করতে পারবে না সে।
কুসুমের কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো কুসুমের মা।
-হতোভাগী এতো বড় সুযোগ পেয়েও তুই হারাবি?গায়ের লোকের লাথিঝ্যাটা খেয়েও তোর লজ্জা নাই?ওতো বড় মানুষ টা যেচে তোরে ঘরে তুলতে চাচ্ছে।আর তুই এখনো বোকামি করবি?এমন সুযোগ বারবার আসে না।
-মা তোমারে দেখে মনেই হচ্ছে না তোমার আরেক মেয়েরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।চাপাটার কথাও তো ভাবো।
-যে গেছে নিজের কপাল নিয়ে গেছে।যে মেয়ে বংশের মুখ পোড়ায় তারে আমি মেয়ে মানি না।কিন্তু এই বরযাত্রী যদি আমার বাড়ি থেকে আইজকে ফিরে যায় আমি কয়ে দিলাম আমি আর তোর বাপ এক দড়িতে ঝুলবো।দুই বোন আর কতো নাক কাটবি আমাগো?
অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেলো কুসুম আর চাপার হবুবরের।লোকটাকে চেনে না জানে না কুসুম।নামটাও জানে না।দেখেনি কখনো।হয়তো ছোটবোনের স্বামী হিসেবে দেখতো।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আর সেই লোকটাই কুসুমের স্বামী।বিয়ে মিটতে মিটতে মাগরিবের আযান হয়ে গিয়েছে।নামায শেষেই বরযাত্রী বউ নিয়ে রওনা হবে।
আজ সারাদিনে এতোকিছুর মধ্যে সায়নের কবরের কাছেই যাওয়া হয়নি চাপার।বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে তার।সায়নের মৃত্যু পর্যন্ত তাকে আর সায়নকে আলাদা করতে পারেনি।কিন্তু কুসুমের মনে হচ্ছে এই একটা বিয়ে তাদের জনম জনমের জন্য আলাদা করে দিয়েছে।কুসুমের ইহকাল পরকাল কোথাও আর হয়তো সায়ন থাকবে না!ভাবতেই পারছে না কুসুম।
কুসুমের খুব চিন্তা হচ্ছে।সে চলে গেলে সায়নের কবরের যত্ন নেবে কে!
খুব সুন্দর একটা ডালিম গাছ লাগিয়েছে কুসুম সায়নের কবরে।তারই বা যত্ন নেবে কে!তার অবর্তমানে সায়নের যে খুব কষ্ট হবে।
বরের পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে কুসুমের সদ্য বিয়ে করা স্বামী রাফসান।বিদায় বেলা আগত।গাড়িতে উঠতেই কুসুমের বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।চেনা গ্রাম,চেনা মানুষ, চেনা পৃথিবী আর সায়নকে ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে অনেক দূর।কে জানে সেখানে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে!কেউ কি এতো সহজে মেনে নেবে তাকে?আর তার স্বামী তার পক্ষেও কি চাপার জায়গায় তার মতো বিধবা একটা মেয়েকে মেনে নেওয়া সম্ভব!ক্লান্তি আর চিন্তায় দুচোখ বন্ধ হয়ে আসে কুসুমের।
(গল্পটির পরের পর্ব অতি শীঘ্রই আসবে,তাই সবাই poesy এর সাথেই থাকবেন)



0 comments:
Post a Comment