"অপয়া"-তামান্না ইসলাম।।পর্ব-০৫


গতরাত ছিলো চাপার জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় রাত।ঝড়বৃষ্টিররাত ১ টা  বাজতেও যখন অনিক ঘরে ফেরেনি চিন্তায় প্রাণ যায় যায় চাপার।ঠিক সেই সময় অনিক এলো কাকভেজা হয়ে। দরজা খুলেই অনিকের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো চাপা।অনিকও দুইহাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো চাপাকে।তারপর চাপার মুখটা আলতো করে তুলে জিজ্ঞেস করলো,

-এই পাগলী,এইভাবে কাঁদছো কেনো?আমি কি মরে গেছি?

অনিকের কথায় চাপার কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেলো।কাঁদতে কাঁদতে সে বললো,

-তুমি আসছিলে না।চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।

-কি ভেবেছিলে?আমি আর নেই?

-একদম চুপ।যত্তসব আজেবাজে কথা।ভিজে গেছো তো একদম।দাড়াও গামছা টা নিয়ে আসি।


চাপা একটা গামছা এনে অনিকের মাথা মুছতে থাকে।তারপর একটা প্লেটে ভাত এনে নিজে হাতে খাইয়ে দিতে দিতে বলে,

-কোথায় ছিলে এতো রাত পর্যন্ত?

-বলছি আগে তুমি খেয়ে নাও।


খাওয়া দাওয়া শেষে অনিক বিছানায় বসায় চাপাকে।তারপর প্যান্টের পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করে। বক্স খুলতেই বের হয়ে আসে একজোড়া রুপোর নুপুর।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে চাপা।নুপুর জোড়া চাপার পায়ে পড়িয়ে দিতে দিতে অনিক বলে,


-পোড়াদাহ গিয়েছিলাম।ওখানে নুপুর ভালো বানায়।ক্লাস শেষে টিউশনি করিয়ে যেতে হয়েছে তো।তারপর আবার ঝড়বৃষ্টি।আটকে গিয়েই তো দেরী হয়ে গেলো আমার পাগলী বউ এর কাছে আসতে।


-এসবের কি দরকার ছিলো শুনি?


-বিয়ের পর তো তোমাকে সেভাবে কিছুই দিতে পারিনি।তাই সোনা না পারি রুপা দিলাম।


-পাগল একটা।আর কখনো এমন পাগলামি করবা না।

মুখে মুখে অনিককে বকাবকি করলেও মনে মনে খুব খুশি হয়েছে চাপা।কতবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নুপুর জোড়া দেখেছে তার হিসেব নেই।সত্যি!প্রিয়জনের থেকে পাওয়া ছোট্ট উপহার ও অনেকটা খুশি এনে দেয়।


আজ সকাল সকাল অনিক ক্যাম্পাসে যেতেই বের হয়েছে চাপা।নিজের জমানো টাকা দিয়ে অনিকের জন্য একটা শার্ট কিনবে সে।মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে নতুন সংসারের টুকটাক তৈজসপত্রের দাম করছিলো সে।আকস্মিকভাবে রাস্তার ওপর পাশ থেকে কেউ এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।কয়েক সেকেন্ড এর মাথায় চাপা বুঝতে পারলো যে মানুষটা তাকে জড়িয়ে ধরেছে সে আর কেউ না তারই বোন।

কুসুমকে ছাড়িয়ে অবাক আর ভয়মিশ্রিত কন্ঠে চাপা বললো,

-আপা তুই এখানে?তুই কিভাবে এলি এখানে?


কুসুম কোনো কথা বললো না।অনেক দিন পর অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নিজের বোনকে পেয়েছে সে।তার কি আর হুস আছে!


পেছন থেকে রাফসান উত্তর দিলো,

-আমি নিয়ে এসেছি।


রাফসানের কথা শুনে পায়ের তলা থেকে মাটি থেকে সরে গেলো চাপার।

কুসুমের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত গলায় সে বললো,

-ছিহ আপা ছিহ।শেষমেশ তুই এই লোকটার সাথে হাত মিলিয়েছিস?আমি ভাবতেই পারছি না।


-চাপা তুই যা ভাবছিস তা নয়।আমার কথা শোন।


-কোনো দরকার নেই।বরং তুই শোন,আমি অনিককে বিয়ে করে ফেলেছি। আর আমি কখনোই ওকে ছেড়ে এই লোকটার সাথে যাব না।


-আরে তুই আমার কথাটা শোন।


-বললাম তো না।আর মিস্টার রাফসান শুনে রাখেন,আমার আপাকে যতোই হাত করেন না কেনো আমাকে আপনি কখনো পাবেন না।


এইবার পা পেরে চাপাকে এক ধমক দিলো কুসুম,

-বোনু!কাকে কি বলছিল জানিস?উনি আমার স্বামী।


কুসুমের কথায় অবাক হয়ে যায় চাপা।সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে তার।এসব কি শুনছে সে!

-কি বলছিস আপা!

-হ্যা তোকে সব বলছি।তার আগে বল তুই এখানে কিভাবে?

-আমরা তো এখানেই থাকি  আপা।অনিক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।


চাপার কথায় অবাক হয়ে যায় রাফসান।কুসুমকে জিজ্ঞেস করে,

-কুসুম তুমি জানতে না অনিক কোথায় পড়ে?


-না ওরা তো আমাদের গ্রাম না। পাশের গ্রাম।তাছাড়া ওদের সেভাবে চিনতাম ও না আমরা।আর আমার বোনটাও তেমনি।নিজের ভালবাসার কথা ও জানায়নি আমাকে।


-জানাতে চেয়েছিলাম আপা।কিন্তু তখন তোর  মনের অবস্থা তেমন ছিলো না।


পরিস্থিতি হালকা করতে পাশ থেকে  রাফসান বলে,

-তা শালিকা,দুলাভাই কে নিয়ে যাবে না তোমার বাড়িতে।নাকি তাও বারণ?


-নিশ্চয় নিয়ে যাব।

মুচকি হেসে বলে চাপা।


২ঘন্টা পর, চাপা আর অনিকের এক কামড়ার পাখির বাসায় বসে আছে রাফসান আর কুসুম।এভাবে বোনকে পেয়ে কুসুমের খুশি যেন আর ধরে না।আর কুসুমের হাসি মুখটা ও বড্ড বেশি সুখ দিচ্ছে রাফসানকে।


ইতিমধ্যে অনিককে খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে চাপা।অনিকও ফেরার সময় সাধ্যমতো বাজার করে এনেছে।রাফসানরা চলে যেতে চাইলেও না খেয়ে কিছুতেই যেতে দেয়নি অনিক আর চাপা।

পুর্বের সমীকরণ যাই থাক এই চারটা এর মধ্যে নতুন করে এক সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।চাপা অবশ্য নিজের কৃতকর্ম আর তখনকার ব্যাবহারে কিছু লজ্জিত আর সংকোচে ছিলো কিন্তু রাফসানের আন্তরিক ব্যাবহারের কাছে তা বেশিক্ষণ টিকতে পারে নি।


রান্নাঘরে বসে রান্না করছে দুইবোন সেইসাথে টুকিটাকি গল্প।এইটুকু সময়ের মধ্যে চাপা চলে আসার পরের সব ঘটনা চাপাকে জানিয়ে ফেলেছে কুসুম।চাপা ও অবশ্য বেশ খুশি।কারণ সেদিন যদি সে পালিয়ে না আসতো তাহলে তার জনমদুখিনী বোন আজ এই দিনটা দেখতো না।মনে মনে রাফসানের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় চাপার।গল্পের এক পর্যায়ে কুসুমকে জিজ্ঞেস করে চাপা,

-আপা তুই কি দুলাভাইকে মেনে নিয়েছিস।মানে আমি বলতে চাইছি তোদের কি স্বামী -স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক  সম্পর্ক হয়েছে?


-না হয়নি।মানুষটা অনেক ভালো রে।আমার সাথে কোনো অসভ্যতা করেনি।আর না কোনো জোর জবরদস্তি। 


-তুই কি সায়ন ভাইকে ভুলতে পারিস নি আপা?


-ভালবাসা কি এতো সহজে ভোলা যায়?


-দেখ আপা তোকে কয়েকটা কথা বলি।যে মানুষটা চলে গিয়েছে সে কিন্তু ফিরে আসবে না আর।চলে যাওয়া মানুষটার জন্য তোর মনে জায়গা থাকলেও বাস্তবে তাকে না টানায় ভালো।এতে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।আর যে মানুষটা তোর অতীত জেনেও তোকে এতোটা সম্মান দিলো তাকে বঞ্চিত করিস না তার অধিকার থেকে।আর তাছাড়া রাফসান ভাই চোখ্র আমি তোর জন্য ভালবাসা দেখেছি।


-কিন্তু ২য় বার কি ভালবাসা যায়?


-২য়,৩য় ভালবাসা বলে কিছু হয়না রে।প্রত্যেক ভালবাসায় আলাদা আলাদা অনুভুতি বহন করে। তাই প্রত্যেক ভালবাসা ই প্রথম ভালবাসা।


চাপার কথাগুলো যেন হ্রদয়ে নাড়া দিলো কুসুমের।কেননা রাফসান নামক মানুষটির জন্য কিছুদিন ধরেই তার মায়া নামক অন্তরের গোপন অনুভুতিরা ছুটে চলেছে।আজ সেই অনুভুতিতে কিছুরা রঙ মিশিয়েছে চাপা।


কুসুমদের গাড়ি এসে থামলো প্রকাণ্ড এক দোতলা বাড়ির সামনে।বেশ পুরোনো বাড়িটা।তবে আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। গাড়ি থামতেই কয়েকজন মহিলা আর কিছু কচিকাঁচা ছুটে এলো তাদের অভ্যর্থনা জানাতে।এদের মধ্যে সেদিনের সেই মহিলাও আছেন যিনি কুসুমকে খাইয়ে দিয়েছিলেন বিয়ের দিন রাতে।এতো মানুষ দেখে কুসুম ও বেশ হকচকিয়ে গেলো।কেননা কে কি হয় তার পক্ষে মনে রাখাও সম্ভব নয়।রাফসান গাড়ি থেকে নেমেই কুশল বিনিময় কর‍তে লাগলো সবার সাথে।

ইতিমধ্যে সারাবাড়িতে অনেক মানুষ উপস্থিত হয়েছে নতুন বউ দেখতে।কুসুম যেহেতু গ্রামের মেয়ে তাই তার কাছে এসব খুবই স্বাভাবিক।এর মাঝেই তাদের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।খাওয়া দাওয়া শেষে কুসুমকে নিয়ে রাফসান দাদীর ঘরে গেলো।

কালো রঙের একটা বনেদী খাটে ধবধবে সাদা বিছানার চাদর পাতা।আর সেখানেই শুয়ে আছেন ভদ্রমহিলা।বেশ বয়স্ক হলেও তার চেহারায় এখনো জৌলুস রয়েছে।দেখেই বোঝা যায় বয়সকালে বেশ সুন্দরী ছিলেন তিনি।বিছানার একপাশে বসে আলতো করে ভদ্রমহিলার গায়ে হাত দিলো রাফসান।তারপর ধীর গলায় ডাকলো,

-দাদী।

ভদ্রমহিলা তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন।রাফসানের ডাকে চোখ মেলে তাকালেন।তারপর আদুরে গলায় বললেন,

-দাদুভাই তুমি নাকি?

-হ্যাঁ দাদী। আমি এসেছি।

-হ্যাঁ টের পেয়েছি।ঠিক বুড়োর মতো গায়ের গন্ধ।বুড়ো বেঁচে থাকতেও আমারে এইভাবে ঘুম থেকে তুলতো।তা দাদুভাই আমার নাতবৌ কই?

-এসেছে তো।

কুসুম এগিয়ে আসো দাদীর কাছে।

এই বসে সরে গিয়ে কুসুমকে বসার জায়গা করে দিলো রাফসান।


কুসুম এগিয়ে গিয়ে ভদ্রমহিলার পাশে বসতে বসতে বললো,

-আসসালামু আলাইকুম দাদী।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।তুমি কেমন আছো দাদুভাই।দেখি তোমার মুখটা।

ভদ্রমহিলা দুহাতে কুসুমের মুখ তুলে রাফসানকে বললেন,

-কিছুই তো চোখে দেখি না।দাদুভাই ওইপাশ থেকে চশমা টা দাও।

চশমা পড়েই কুসুমকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো ভদ্রমহিলার।কুসুমের মাথায় আদর করতে করতে বললেন,

-মাশাল্লাহ!সুন্দর বউ হয়ছে।রাফসান দাদুভাই আলমারি তে দেখো একটা কাঠের বাক্স আছে।ওটা আমারে দাও।


কাঠের বাক্স খুলতেই বেশ অনেকগুলো ভারী ভারী গয়না দেখা গেলো। বোঝাই যাচ্ছে সেগুলো বনেদী গয়না। সেইসাথে অনেক ভারী ভারী আর পুরোনো মডেলের।


বাক্স থেকে এক জোড়া বালা বের করে তিনি কুসুমের হাতে দিলেন।তারপর বললেন,

-বুড়া বেঁচে থাকতে এইগুলি গড়ায় দিছিলো।আজ সে ও নাই।আমার তিনকাল এক কালে ঠেকছে তাই এইগুলো রাখছি নাতনী আর নাতবৌদের  জন্য।তা নতুন বউ হাদিয়া পছন্দ হয়েছে?


-জ্বি দাদী।


-তয় আলহামদুলিল্লাহ।সুখী হউ দাদুভাই।আমার বংশবৃদ্ধি করো।


দাদীর কথায় রাফসান আর কুসুম দুজনেই লজ্জা পেয়ে গেলো।


পরের দিন ভোর ভোর তারা রওনা দিলো বাড়ির পথে।গাড়ির মধ্যে সারা রাস্তা ঘুমিয়েছে কুসুম।আর রাফসান!জেগে জেগে কুসুমের ঘুমন্ত মুখ দেখেছে।কতো মায়া যে লুকিয়ে আছে সেই মুখে তা কেবল রাফসানই জানে।

কুসুমের ঘুম ভাঙতেই দেখলো রাফসান তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।কুসুম বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো সেইসাথে রাফসান নিজেও।ধরা খেয়ে রাফসান আমতা আমতা করে বললো,

-ইয়ে মানে বলছিলাম কি চা খাবেন।

-খাওয়াই যায়।

-তাহলে গাড়ি দাড় করাতে বলি?

-আচ্ছা।


তারপর রাস্তার ধারের দোকান থেকে চা খেয়ে তারা রওনা দিলো বাড়ির পথে।আঁকাবাঁকা ছবির মতো পথ পাড়ি দিয়ে তারা পৌছলো তাদের গন্তব্যে।


কুসুমরা গ্রাম থেকে এসেছে দুইদিন হয়েছে।এর মধ্যে পুরোদমে কাজে লেগে গিয়েছে রাফসান।বিয়ের কটা দিন ব্যাবসায় যা অবহেলা হয়েছে খেটে পুষিয়ে নিতে চায় সে।


এদিকে চাপার কাছ থেকে ফিরে আসার পর কুসুম ঠিক করেছে রাফসানের সাথে দুরুত্ব মিটিয়ে নেবে সে।তাকে দেবে স্বামীর অধিকার।

সেই চিন্তা করেই রাতের বেলা সবাইকে খেতে দিয়ে ঘরে যায় কুসুম।লাল টকটকে জামদানী পড়ে নেয় সে।চুলগুলো ছেড়ে দেয়।সেইসাথে হাল্কা সাজ আর গয়না।তারপর অপেক্ষা করতে থাকে রাফসানের জন্য।সে জানে ঠিক এইসময় রাফসান ঘরে ফিরবে। 

এভাবেই অনেকটা সময় কেটে যায়।কিন্তু রাফসানের ফিরে আসার নাম নেই।এদিকে বারবার ঘড়ির দিকে তাকায় কুসুম।নাহ!এতোক্ষণে তো রাফসান ফিরে আসে।আজ কি হলো!বুকের মধ্যে বিষাদের সুর বেজে ওঠে কুসুমের।প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষার প্রহরগুলো কেনো যে এমন স্বস্তিহীন হয় কে জানে!


এদিকে রাফসানের বাবা এক ধ্যানে খেয়ে যাচ্ছিলেন।বলতেই হবে তার বৌমার হাতের রান্না খাসা।ধ্যান ভাঙলো মোবাইলের রিংটোনে।রাফসানদের কর্মচারী তুহিন কল দিয়েছে।রিসিভ করলেন তিনি,

-হ্যালো তুহিন বল।

-চাচা রাফসান ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে।শিগগির সদর হাসপাতালে চলে আসেন।


রাফসানের বাবার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।মাথার মধ্যে চক্কর দিচ্ছে।একি শুনলেন তিনি!

পাশ থেকে সোয়েদা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,

-কি হয়েছে?


-রাফসানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।


কথাটা শোনা মাত্রই সোয়েদা বেগমের বুকে শোকের মাতল উঠলো।

সজোরে কান্না করে উঠলেন তিনি। সেই সাথে বিলাপ করতে লাগলেন,

-আমি জানতাম আমার ছেলে বাঁচবে না।আমার মায়ের মন।ওই কালনাগিনী ঘরে তুলে আমার সংসার ছারখার হয়ে গেলো গো।আমার তো ওই একটাই ছেলে।ওই স্বামীখেকো ডাইনি বাঁচতে দিলো না আমার ছেলেকে।আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো।ও রাফসানের বাপ তুমি আমারে নিয়ে চলো।আমার বুকের মানিকরে দেখবো।


সবকটা কথায় কুসুমের কানে এলো। কিন্তু এখন সেদিনে নজর নেই কুসুমের। রাফসানের জীবনই আজ তার বড় চাওয়া।কাঁদতে কাঁদতে কুসুম রাফসানের বাবার কাছে এসে মিনতি করলো,

-বাবা আপনার দুই পায়ে পড়ি আমাকে নিয়ে যান ওর কাছে।আমি ওকে একটাবার দেখতে চাই।

কথাটা শোনামাত্র কুসুমের শ্বাশুড়ি কুসুমের চুলের মুঠি ধরে তাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেলো।তারপর বাইরে থেকে দরজা দিয়ে বলতে লাগলো,

-অপয়া মেয়ে মানুষ।আজ শুধু তোর জন্য ছেলেটা আমার এক্সিডেন্ট করেছে।আগে ছেলের অবস্থা দেখে আসি।তারপর ফিরে এসে তোকে তাড়াবো।

এই বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।রাফসানের বাবাও কথা বাড়ালো না। তার সে মনের অবস্থা নেই।হাটা দিলো স্ত্রীর পিছু পিছু।


এক্সিডেন্ট! ঠিক এমনি একটা এক্সিডেন্ট কুসুমের জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিয়েছিলো।সেদিন কুসুমের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই বিদেশের রাস্তায় হাটছিলো সায়ন।অন্যমনষ্ক হয়ে রাস্তা পার হতেই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় তাকে।সেদিনই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় সায়ন।সেইসাথে বিদায় নেয় কুসুমের সুখ আর আনন্দ।সায়নের মৃত্যুর পর কুসুম ফোনটা বিসর্জন দেয় পুকুরের পানিতে।


শ্বাশুড়ি বাইরে থেকে দরজা দিয়ে যাওয়ার পর কুসুম আর সময় নষ্ট করে না।ওযু করে তারপর দুরাকাত নফল নামায পড়ে মোনাজাত ধরে,

-হে আল্লাহ,হে রহমানির রহিম।আজ তুমি প্রমাণ করে দিলে আমি সত্যিই অপয়া।সবাই ঠিকই বলে।কিন্তু আল্লাহ আমি নিজে তো নিজেকে তৈরী করিনি।তুমি করেছো।তবে কেনো আমাকে পৃথিবীতে পাঠালে।আমার জন্য সায়ন মরেছে। আজ যখন রাফসানকে মনের কথা বলতে যাব তারও এতোবড় ক্ষতি হলো।হে মাবুদ আমার মতো রাক্ষসীর বেঁচে থেকে লাভ কি।তোমার প্রাণ চায় তো!আমার প্রাণ নাও।কিন্তু রাফসানকে বাঁচিয়ে দাও।ইতিহাসে বাবর নিজের জানের সদকা দিয়ে শাহজাহানের প্রাণ বাঁচিয়েছিলো।তার  দোয়া তুমি যদি কবুল করো আমার টাও করতে হবে।হে মাবুদ,আমার জানের সদকা নিয়ে রাফসানকে বাঁচিয়ে তোলো তুমি।


এরপর কুসুম ঠিক করলো গলায় দড়ি দেবে কিন্তু কিছুতেই ফাঁস বাঁধতে পারছিলো না সে।বাধ্য হয়ে সারাঘর খুঁজতে লাগলো এমনকিছু যা দিয়ে নিজের জানের সদকা দেওয়া যায়।সারা ঘর খুঁজে ইঁদুর মারা এক শিশি বিষ খুঁজে পেলো সে রাফসানের ঘরে।সেটাই খেয়ে নিলো সে।তারপর.......

দুচোখ আস্তে আস্তে বুজে এলো তার।


(গল্পটির পরের পর্ব অতি শীঘ্রই আসবে,সবাই Poesy এর সাথেই থাকবেন।)

0 comments:

Post a Comment